Hot Posts

6/recent/ticker-posts

আপনি কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ?তাহলে লেখাটি আপনার জন্যই


শুরুতে তিনজন ব্যক্তির ব্যাপারে বলবো। তিনজন ব্যক্তি ভিন্ন পেশায় থাকলেও, তাদের মধযে একটি মিল আছে। তারা তিনজনই IBA থেকে MBA করা। আরও কিছু মিল আছে।

১) মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহ্‌রিয়ার আলমঃ



এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী IBAites যদি বলা হয় তবে যার নামটি প্রথমেই আসে, তিনি হলেন আমাদের দেশের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলম এমপি, বাংলাদেশের কেবিনেটের সবচেয়ে সৎ এবং মেধাবী সদস্যদের একজন। উনার প্রথমে ইচছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, কিন্তু HSC এর ফলাফল আশানরুপ না হওয়ায়ে ভরতি হন ঢাকা সিটি কলেজের বি. কমে। যেটি বর্মাতনে জাতীয় বিশ্বববিদ্যালয়ের অধীন।


২) জনাব ইয়াসির আযমানঃ


বাংলাদেশে পরিচালিত সবচেয়ে বৃহৎ দুইটি বহুজাতিক কোম্পানির নাম আসলে যেই নামটি অবশ্যই আসবে সেটি হল গ্রামীণফোন। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান CMO (Chief Marketing Officer) হলেন জনাব ইয়াসির আযমান। গ্রামীণফোনে যোগদানের আগে তিনি BATB, Telenor India, প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপকের পদে কাজ করেছেন। গ্রামীনফোনের সিইও প্রথম কোন বাংলাদেশি হলে, উনার হবার একটা ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আরও দুরেও যেতে পারেন, কারণ ভদ্রলোকটির বয়স খুব একটা বেশি নয়। জি হ্যাঁ উনি IBA থেকে এমবিএ করেছেন। তো, এমবিএর আগে ব্যাচেলরটা কোথা থেকে করেছেন?ঢাবি?...না। বুয়েট?...না জাবি?...না কুয়েট?...না চবি?...না রাবি?...না বাংলাদেশের বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয় ?...না। NSU?...না অন্যান্য কোন খ্যাতনামা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ?...না।ইয়াসির আযমান সাহেবের ব্যাচেলর ডিগ্রি ছিল বি.কম এ। তিনি বি.কম করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত আবুজর গিফারি কলেজ থেকে! এখন আইবিএ, ঢাবি FBS, NSU ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেধাবী তরুণরা তার অধীনে কাজ করার জন্য সিভি নিয়ে বসে থাকে , বর্তমানে তিনি শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ।

৩) জনাব আবরার আনোয়ারঃ

আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশে পরিচালিত বৃহত্তম বহুজাতিক ব্যাংক হল Standard Chartered Bangladesh. Itd. দক্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠানটির CEO (Chief Executive Officer) পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন যিনি, সেই ব্যক্তিটি হলেন জনাব আবরার এ আনোয়ার। অনেকেই জানেন তিনি আইবিএ, এমবিএ। তিনি চিটাগাং এর মানুষ। স্কুল ও কলেজ চিটাগাং এ ব্যাচেলর করেছেন, চিটাগাং কমার্স কলেজ থেকে। যেটি বর্তমানে জাতীয় বিশববিদ্যালয়ের অধীনে।

এক আপুকে জানি, তিনি আইবিএ থেকে MBA complete করেছেন, খুব বেশি দিন হয়নি। নাম বললে আইবিএর অনেকেই হয়ত চিনবেন, permission নেয়া হয়নি বলে নাম বলছিনা। তিনি National University এর অধীনে ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট করেন। উনার কথা কেন এখানে বলছি, তিনি তার IBA MBA এর ব্যাচ হতে সিজিপিএর দিক থেকে ২য় স্থান অর্জন করেন, জি হ্যাঁ 2nd position! যিনি ১ম হন। তার সাথে সেই আপুর সিজিপিএর পারথক্যয খুবই খুবই খুবই কম। একটুর জন্য। তিনি ১ম হতে পারেননি। বর্তমানে তিনি বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের অফিসে ভালো পজিশনে জব করছেন।

উনার ব্যাচে বুয়েট, ঢাবি, এনএসইউ, জাবি, মিস্ট, কুয়েট, এমনকি আইবিএ থেকে বিবিএ করা ছাত্র ছাত্রী ছিল, তাদের অনেককে পিছনে ফেলে তিনি ২য় ।

এখন কিছু ভালো মানন্দ কথা বলি৷

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এর ছেলে মেয়েদের অরজন নেহাতই কম নয়। অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পাশ করা মানুষ আছেন যারা নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছেছেন। বিসিএস ফরেন এ ফার্স্ট , অসংখয বিসিএস ক্যাডার, মন্ত্রী, এমপি, সেলিব্রিটি, পরিচালক, বহুজাতিক এবং শীর্ষ দেশি প্রতিষ্ঠানের CEO, CFO, CMO, President, Chairman ইত্যাদি, শিল্পপতি, কোটিপতি, সচিব, অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, পিএইচডি, বিজ্ঞানী, গবেষক, শীর্ষ মিডিয়ার শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিক, এসিএ, এফসিএ, সিএমএ ইত্যাদি আরও কত কি। এমন কি বাংলাদেশের বাইরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা মেধার স্বাক্ষর রাখছে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের সাফল্যের পাল্লার চাইতে ব্যর্থতার পাল্লাটাই যেন খুব বেশি ভারী, অনেক বেশি ভারী। কিন্তু কেন? অনেক কারণ আছে। সবটা বলা যাবেনা। তবে অন্যতম প্রধান কারণ হল মোটিভেশন এবং ইচ্ছা শক্তির অভাব। আর কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কারণে অনেকের মধ্যেই মোটিভেশন ও আগ্রহ কমে যায়। অনেকেই নিজের potential কে অনুধাবন করতে পারেন না। অনেকেই confidence এর ঘাটতিতে ভোগেন। এটি একটি কারণ। যেমন, এমন অনেক NU এর student আছে যারা ভালো জায়গায় MBA করতে চায় কিনতু IBA ,MBA এর ভর্তি পরীক্ষা দিবেনা । তাদের যুক্তি সেখানে সব DU,BUET.NSU,CU,JU,KUET এর ছাত্র চান্স পায় । NU এর ছাত্ররা কিভাবে পরীক্ষা দিয়ে টিকবে? যদিও প্রতি বছরই টিকে। আবার অনেকে পরীক্ষা দিয়ে, ভালো না হলে নিজের NU background কেই দোষ দিবেন। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দায়ী যেই অবস্থাকে মনে হয় সেটি হল আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিজেদেরকে comfort zone এর বাইরে নিয়ে যাইনা। আমরা নিজেদেরকে যথেষ্ট Push করিনা। এর কারণ হয়তোবা confidence এর ঘাটতি। মূল কথা বলতে DU, BUET. CU, KUET, JU, NSU etc এর ছাত্ররা কেননা কোন ভাবে নিজেদেরকে develop করার চেষ্টা করে, সেখানে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদেরকে develop করার চেষ্টা করিনা। বলা যায় আমরা নিজেদেরকে একটি অদৃশ্য দেয়ালের মধ্যে বেধে রাখি। আমরা challenge কে Problem হিসেবে নেই, learning opportunity হিসেবে নেই না। আমরা extra mile যেতে রাজি নই, যেখানে অন্য শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঠিকই নিজেদের push করছে, তারা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে নিজেদের develop করার, value add করার। তারা continuously চেষটা করে নিজেদের updated রাখার, বরতমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের গড়ে তোলার, আমরা সেটা কতটুকুই বা করি? আরেকটি কারণ হল আমাদের, National University এর ছাত্রদের মধ্যে Procrastination করার প্রবণতা অনেক অনেক বেশি। এটি করা যাবেনা।

আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনা কে আমরা utilize করিনা। শুধু একটি বছর বিশেষ করে এইচএসসি থেকে এর কিছু পরের সময় কাঙ্ক্ষিত অবস্থা অর্জন হয়নি বলে ধরে নেয়া হবে যে সেটি আমাদের পুরো জীবনকে define করবে? অবশ্যই না। আমাদের নিজেদের potentiality কে কাজে লাগাতে হবে। একটা সময় আমাদের কে বিসিএস হােক, আইবিএ হােক, ব্যাংক হােক কিংবা কর্পোরেট সেক্টর হােক, সেখানে আমাদের ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শীর্ষ স্থানীয় প্রাইভেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে কমপিটিশন করতে হবে। এর জন্য এখন থেকেই আমাদের সর্বাত্মকভাবে নিজেদের develop করতে হবে।

আইবিএ বিশ্বাস করে যে একজন মানুষ অতীতের যে কোন অবস্থা থেকে ইতিবাচকভাবে ঘুরে দাড়াতে পারে, নিজেকে একজন সফল ম্যানেজার হিসেবে তৈরি করতে পারে। এজন্য যারা ঘুরে দাঁড়াবার জন্য দৃঢ় সংকল্প তাদেরকে আইবিএ একটি সুযোগ দেয়। আবেদন করার জন্য । minimum points, যা এমনিতেও অনেক কম, সেটি বাদে সবার জন্য । সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একই। DU EMBA তেও যেমন চাকরীর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয় IBA MBA তে। সেটাও দেয়া হয়না। কে বুয়েট/কুয়েট/চুয়েট থেকে আসলো, কে ঢাবি থেকে আসলো, কে জাতীয় বিশ্বববিদ্যালয় থেকে আসলো, কে ব্র্যাক থেকে কে এনএসইউ থেকে আসলো, সেটাকে selection এর ক্ষেত্রে একদম গোণায় ধরা হয়না। আপনাদের performance যদি রিটেনে এবং ভাইভাতে ভালো হয় তবে আপনাদের আগের রেজালট কি কিংবা আগের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কি কিংবা আগে কোন জব করেছেন কিনা সেটা কোনো ফ্যাক্টর না ।
৫৬ তম ব্যাচে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি সিলেবাসে গ্র্যাজুয়েট করা ছাত্র আমিই একমাত্র ছিলাম। ৫৭ তম ব্যাচে ছিল মাত্র ২ জন।
আমার ইচ্ছা ৫৮ তম পরিক্ষায় অনন্তত ৫ জন NU এর সরাসরি ছাত্র ঢুকুক। সেই শুভকামনা রইল আপনাদের সবার প্রতি

written - Manzur EKhoda


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ