Hot Posts

6/recent/ticker-posts

আমাদের শিকলেবাধা শিক্ষাব্যবস্থা...এবং আমাদের ভবিষ্যৎ .........

সায়েন্সে পড়লে বুয়েট কিংবা মেডিকেল, কমার্সে পড়লে বিবিএ আর আর্টসে পড়লে ল: এই হলো সংক্ষেপে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এটা যেন একটা সার্বজনীন স্বীকৃত সমাজের আদর্শ শিক্ষার মানদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও সেটা তো অনার্স পড়ার পর্যায়ে গিয়ে, এর আগে? এসএসসি কিংবা এইচএসসি পর্যায়ের কোন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপ করা হয় সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে কিনা, তা দিয়ে।
অপেক্ষাকৃত একটু দুর্বল যারা, তারাই না মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে! আর অনার্স পাস করার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বাদে আর বাদ বাকি সকল শিক্ষার্থীর গন্তব্য হচ্ছে বিসিএস। কখনও তো চার বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও শেষে গিয়ে বিসিএস এর এডমিন ক্যাডারের পিছনে ছুটতে দেখা যায় কাউকে। ছুটবেই বা না কেন? ছেলের বাবা-মা হোক কিংবা মেয়ের বাবা-মা, বিসিএস পাস করা পাত্র/পাত্রীর জয়ধ্বনি সবখানে।
এভাবে আর কতদিন চলবে আমাদের দেশ? হ্যাঁ, আমাদের ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। ধরে নিলাম যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেশেই তৈরী হচ্ছে। তাও সেটা কি জাতিগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট? শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে আমরা জাতিগতভাবে কত
দূর যাব? আমাদের দরকার শিক্ষক, উকিল, গায়ক, নায়ক, খেলোয়াড়, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ সব পেশার যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ।
তবেই না আমরা দেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে পারব। সত্যিকার অর্থেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। হ্যাঁ, আমাদের প্রশাসনে মেধাসম্পন্ন দক্ষ কর্মকর্তা প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসন চালাচ্ছে তো রাজনীতিবিদেরা। সেখানে যদি কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করে, তবে প্রশাসন কি সুষ্ঠভাবে চলতে পারবে?
সেই গিটার বাজানো ছেলেটা যদি প্রশাসনে চলে যায়, তবে গান কে গাইবে? আর সেই ভাল ফুটবল খেলা ছেলেটা যদি প্রশাসনে চলে যায়, তবে ফুটবলার কে হবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার সময় বোধহয় এসেই গিয়েছে, না হলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
এই যে প্রচলনগুলো হয়ে গিয়েছে আমাদের সমাজে এর পেছনে যথার্থ কারণ রয়েছে। এখানে পাঁচটি অন্যতম বিশেষ কারণ আলোচনা করা যেতে পারে।
1) পঠিত বিষয় সম্পর্কিত চাকুরী না থাকা:
মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর সাথে সরাসরি চাকুরীর ব্যাপারটি জড়িত। বিশেষ করে মেডিকেল পড়লে ডাক্তার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটাও সরাসরি পঠিত বিষয়ের সাথে জড়িত। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বেশিরভাগ বিবিএ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দ্বারাই চলছে বিবিএ পরবর্তী চাকুরীর বাজারের সুবাদেই। অথচ প্রত্যেকটা বিষয় সম্পর্কিত চাকুরীক্ষেত্র থাকলে এই ব্যাপারটা ঘটত না।
2) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ নেই:
অনেক দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই খেলাধুলা, আর্ট কিংবা মিউজিক এর জন্য আলাদা শিক্ষক থাকে। যিনি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার জন্যই না, বরং বাস্তব অর্থেই প্রতিটা শিক্ষার্থীর ঐসব বিষয়ের দক্ষতা যাচাই করে দেখেন। যদি সত্যিই কোন শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্ভাবনা দেখা যায়, তবে তাকে সেভাবেই গড়ে তোলা হয়।
আমাদের দেশে এমন সুযোগ নেই যে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় খেলাধুলা, আর্ট, কিংবা গানে বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠবে। অন্যান্য দেশে যেরকম কারিকুলামের মধ্যেই এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে, আমাদের দেশে বরং কোন কোন শিক্ষক পড়াশোনা বাদে অন্য কিছু না করতেই উৎসাহিত করে থাকেন।
3) স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের সাথে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার মান ও ফলাফলে পার্থক্য:
বেশিরভাগ স্কুল-কলেজেই বিজ্ঞান বিভাগের সাথে অন্যান্য বিভাগের গুণগত পার্থক্য থাকে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা থাকে অনেক বেশি। এই কারণেই “ভাল-ছাত্ররা” বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ লাভ করে থাকে। আর বোর্ড পরীক্ষাতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত জিপিএ পাঁচ এর সংখ্যা বেশি থাকে বিধায় অনেকে জিপিএ পাঁচ পাবার লোভে বিজ্ঞান পড়ে।
4) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও অন্যান্য পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা:
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও হয়তো অনেক সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো নতুন কিছু নিয়ে গবেষণা বা উদ্ভাবনের প্রতিভা রয়েছে।
কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে যখন তারা সেটা করতে পারে না, তখন তারাও গতানুগতিক চাকুরীজীবনের দিকেই ধাবিত হয়। অথচ আমাদের দেশেরই সন্তান উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য কোন দেশে গিয়ে পর্যাপ্ত সুবিধা লাভ করার পর সাক্ষরতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম হয়।
5) ভালো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশাকে বেছে না নেওয়া:
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক ভাল শিক্ষার্থী শিক্ষকতা করলেও প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই স্বেচ্ছায় চাকুরীটি বেছে নেন। এর কারণ অবশ্যই কম বেতন এবং যথাযথ সম্মানের অভাব। অথচ ঠিক ঐ পর্যায়ের শিক্ষকের প্রভাবই একটা শিক্ষার্থীর উপর সবচেয়ে বেশি থাকে। আর ঐ অল্প বয়সেই একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখতে শেখে। সবচেয়ে ভাল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা করলে স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হত না।
এত কিছুর পরেও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা হচ্ছে, অনেক তরুণ শিল্পী স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছে, অনেক তরুণ রাজনীতিবিদ হচ্ছে। বাংলাদেশে আয়নাবাজির মত সিনেমা হচ্ছে, এদেশের ক্রিকেট দলটা বিশ্বমানে উন্নীত হচ্ছে। তবে ভাবার বিষয় এই ব্যক্তি সাফল্যগুলোয় আদৌ প্রতিষ্ঠানের অবদান আছে কিনা। হয়তো এরা অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সাফল্যের শিখরে পৌছায় । হয়তো এদের মত আরও অনেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গ্যাঁড়াকলে পড়ে হারিয়ে যায়।
শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া চাই, যেন তাতে শুধু শিক্ষাটুকু ছাড়াও আরও কিছু পাওয়ার থাকে। যেন কেউ বলতে না পারে, মার্গারিতা মামুন এদেশে জন্ম হলে অলিম্পিক গোল্ড মেডেল জিততে পারত না, হয়তো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা কিংবা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে কোন এক ভিড়ে হারিয়ে যেত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. Not truly, We entitle that devise main in-steal of the a multiple of backs a decorous interesting impact for you to tutor's head. We would lease that volition dapper & easy bid cure-summations for you to factory beliefs and properly. Production Engineering

    উত্তরমুছুন
  2. Great blog. All posts have something to learn. Your work is very good and i appreciate you and hopping for some more informative posts. Indian black granite

    উত্তরমুছুন
  3. Thanks for this. I really like what you've posted here and wish you the best of luck with this blog and thanks for sharing. Thomas Hoyne Elementary

    উত্তরমুছুন