ট্যালিঃ একাউন্টিং তথা হিসাব রক্ষণা-বেক্ষন এর জন্য সব চেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার হল এই ট্যালি সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারটি ভারতের ব্যাঙ্গালোর এর Tally Solutions Pvt Ltd নামক কোম্পানিটি তৈরি করে বাজারজাত করে। ধীরে ধীরে এটি একাউন্টিং সফটওয়্যার এর বাজার দখল করে নেয়। আমার এটা সাজেস্ট করার সবচেয়ে বড় কারন হল এটা বাংলা ভাষা সাপোর্ট করে, ফলে ট্যালি দিয়ে খুব সহজেই আপনার প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিকাশ কে মায়ের ভাষায় কম্পিউটারাইজ করে নিতে পারেন।
বাজারের সবগুলো সফটওয়্যারের মধ্যে ট্যালি অনেক বেশি ফিচার সমৃদ্ধ এবং উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সফটওয়্যার। ২০ বছর ধরে এটি ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে লার্জ কর্পোরেশনগুলোর হিসাবরক্ষণ চাহিদা পূর্ণ করে আসছে।
কেন ট্যালি সেরা?
ট্যালি.ইআরপি ৯ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে ভারতের ট্যালি সল্যুশনস। দীর্ঘদিনের হিসাব রক্ষণ সফটওয়্যার তৈরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধ-যুগের প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয়েছে এ অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারটি। একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ হিসাবরক্ষণ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অডিট সহ সম্পূর্ণ ফিচার এ সফটওয়্যারটিতে রয়েছে।
কারা সফটওয়্যারটি ব্যবহার করেন?
বিশ্বব্যাপী ২ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী ট্যালি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে তার মধ্যে ৭০% শতাংশই ট্যালি সফটওয়্যারের দখলে।
কেন এত জনপ্রিয় ট্যালি?
সফটওয়্যারটি এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ কি? কারণ এটি ব্যবহারকারী বান্ধব, সহজেই যেকেউ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের হিসাব রাখতে পারেন এবং মাত্র কয়েক ক্লিকেই প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বের করা যায় সফটওয়্যারটির মাধ্যমে।
চাকুরীতে কেমন সুযোগঃ
International , Multinational company , Industry , ব্যাংক ,বীমা , EPZ , NGO, বিদেশী সংস্থা এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানে হিসাব নিকাশ করতে TALLY সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় । আপনি যদি ফ্রেশার হন এবং CV তে TALLY কোর্সে পারদর্শী উল্লেখ থাকলে জব পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী । কারন আপনি সহজেই প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিকাশ করে দিতে পারবেন এবং এটা একটি বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে । বিদেশী প্রতিষ্ঠান যেমনঃ Unicief , Save The Children এর মত সংস্থা গুলোতে শুধু জব না ইন্টার্নশিপ(Paid) করার আবেদন করতে TALLY সফটওয়্যারে পারদর্শী দের কাজের সুযোগ দেয় । বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জব সার্কুলারে TALLY কোর্সে পারদর্শী উল্লেখ করে দেয় ।
এই কোর্স টি করতে ৫,০০০- ৭,০০০ টাকা খরচ হয় । ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এই কোর্সটি করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান । চট্টগ্রামের চকবাজারে ৫,০০০ টাকা দিয়ে কোর্সটি শিখতে পারবেন । এছাড়া আপনি BDjobs.com এ অনেক প্রতিষ্ঠান এই কোর্সটি অফার করে থাকে । ব্যবসায়ের শিক্ষার্থীদের অবশ্যই এই কোর্সটি জানা আবশ্যক । বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের চাকুরীতে Promotion এর জন্য এই কোর্সটি শেখার জন্য বলে । এই কোর্সটি করতে মাত্র ২-৩ মাস সময় লাগে ।
এছাড়া ইউটিউবেও অনেকেই ফুল কোর্স বিনামূল্যে শেখায় । তবে ইউটিউব থেকে শেখার সময় খেয়াল করবেন বাংলাদেশী ভার্সন কিনা কারন ভারতে যেটা শেখায় সেটা অন্য ফিচারের বাংলাদেশের সাথে ভার্শন মিল নেই ।
ট্যালি ইআরপি - ৯ (Tally.ERP 9) এর ফিচারসমূহঃ
* ইনভেনটরি
ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার সঙ্গে গোডাউনে থাকা মালামালের হিসাবরক্ষণ খুবই জরুরী। একে করে জানা যায় কোন কোন পণ্য প্রতিষ্ঠানে আছে এবং কি পরিমাণে আছে। এতে সহজে যেমন বিক্রয় সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তেমনি প্রয়োজনীয় কি কি মালামাল প্রতিষ্ঠানে কিনে আনা বা উৎপাদন করা জরুরী সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
* হিসাবরক্ষণ:
একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ হিসাবরক্ষণের জন্য যত সুবিধা থাকার প্রয়োজন তা সবই রয়েছে Tally.ERP 9 সফটওয়্যারটিতে। আগেই বলেছি ট্যালি ২০ বছর ধরে কয়েক মিলিয়ন প্রতিষ্ঠানের বাস্তবভিত্তিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, তাই ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর হিসাবরক্ষণেও ট্যালি সফটওয়্যারটি যথেষ্ট।
* পেরোল(payroll):
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন হিসাব খুব সহজে করে দেয়ার জন্য ট্যালি ইআরপি ৯ সফটওয়্যারটিতে রয়েছে পেরোল হিসাবরক্ষণের সুবিধা। সহজেই স্যালারি শিট তৈরি করে তা মূল হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় করার সুযোগ রয়েছে সফটওয়্যারটির মাধ্যমে।
ট্যালিতে আপনি যা যা পাচ্ছেন :
• লেজার বুক
• প্রতিটি লেনদেনে জন্য ভাউচার
• ট্রাইল ব্যালেন্স
• ব্যালেন্স শীট
• ইনভেন্টরি
• পে-রোল
• কস্ট সেন্টার
• পয়েন্ট অফ সেলস
• ডে বুক
• ডাটা ইমপোর্ট এবং ব্যাকআপ
• নেটওয়ার্ক সাপোর্ট
• মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ
• মাল্টি কারেন্সী
• একাধিক ইউজারসহ প্রয়োজনীয় সব ফিচার। যেগুলো সহজেই কাস্টোমাইজ করে নিজের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা যায়।
এই সফটওয়্যারটির আরেকটি বড় ধরনের সুবিধা হলো সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা ফোল্ডার কপি পোর্টেবল ডিভাইসের মাধ্যমে আরেকটি কম্পিউটারে নিয়ে কোনো প্রকার ইনস্টলেশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।
ট্যালি একটি বানিজ্যিক হিসাবরক্ষণ সফটওয়্যার তাই এটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে পে করতে হবে। তবে আশার কথা হলো এর একটি এডুকেশন ভার্সন রয়েছে যা দিয়ে আপনি সফটওয়্যারটির ব্যবহার বিধি জানতে পারবেন। এছাড়া ছোটোখাটো কাজও করা যাবে। তবে পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ ব্যবহার করতে অবশ্যই টাকা দিয়ে কিনতে হবে।
অনেকেই ভাবছেন, আমি তো অ্যাকাউন্টিং জানি না, আমি কি শিখতে পারবো? তাদের জন্য বলছি, আগ্রহ থাকলে অবশ্যই পারবেন, তার জন্য আপনাকে অ্যাকাউন্টিং খুব একটা জানতে হবে না। আপনি কি ধরনের হিসাব করবেন তার একটি তালিকা দিলাম আপনাদের সুবিধার্তে।
ট্যালি শিখার আগে ——-
আপনার প্রতিষ্ঠানে যা যা থাকতে হবেঃ
১। পন্য ক্রয়
২। স্টক
৩। বিক্রয়
৪। ক্রয় এবং বিক্রয় ফেরত
৫। বিভিন্ন ধরনের খরচ ( বেতন , বিল ইত্যাদি)
৬। ব্যাংকিং
অথবা, আপনার প্রতিষ্ঠানে নিম্নের কাজ গুলি হয়ে থাকেঃ
১। পন্য ক্রয়
২। স্টক
৩। প্রাইস লিস্ট ( খুচরা , পাইকারী, স্পেশাল অফার)
৪। বিক্রয়
৫। সার্ভিসিং
৬। ট্রেনিং
৭। ব্যাংকিং
৮। বিভিন্ন ধরনের খরচ
৯। বিবিধ ইনকাম
এসবের বাইরে আপনাকে যা যা জানতে হবেঃ
একটা লেনদেন এর দুইটা সাইড থাকে । এটি হলো ডেবিট ও ক্রেডিট। আপনি যা পেলেন তা ডেবিট এবং যা হারালেন তা ক্রেডিট। আর হ্যাঁ, একটা প্রতিষ্ঠানের হিসাবের দুইটা দিক থাকে। দায় এবং সম্পত্তি। হিসাব বিজ্ঞানের এই সামান্য জ্ঞান নিয়েই আমরা ট্যালি শিখতে পারি। তবে ভালোভাবে শেখার জন্য হিসাব বিজ্ঞানের উপর অবশ্যই দক্ষতা থাকতে হবে।
শেষ কথা
আমরা এখানে ট্যালি সফটওয়্যারের এর খুটিনাটি বিষয় নিয়ে রিভিউ করেছি।আপ্নি এটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন,আশা করি আপনার অনেক কাজ সহজ করে দিবে এই সফটওয়্যারটি। আপনি সফটওয়্যারটি খুজে থাকলে থাকলে গুগল সার্চ করে পেয়ে যেতে পারেন যেমন Tally Solutions BD এবং tally software in bangladesh অথবা লিঙ্কে ক্লিক করলে পেয়ে যাবেন একজন ট্রাস্টেড ট্যালি সফটওয়্যারটি প্রভাইওডার। ধন্যবাদ
আমাদের রিভিউটি কেমন হয়েছে বলতে ভুলবেন না।
0 মন্তব্যসমূহ